বেড়েই চলেছে চালের দাম সকালে এক তো বিকেলে আরেক!

DSCF4518.jpgচাকতাই পাইকারি বাজারে মাঝারি মানের চাল হিসেবে পরিচিত কাটারিভোগ গতকাল সকালে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছিল ২৮০০ টাকায়। বিকেল গড়াতে না গড়াতে সেই চালের দাম দাঁড়াল ৩০০০ টাকা। ফলে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম বাড়ল ৪ টাকা। শুধু কাটারিভোগ নয়, বাজারের প্রায় সব চালের দামই এখন সকাল-সন্ধ্যা পরিবর্তন হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্ট সবার একটাই অভিমত, দেশের টানাটানি চালের বাজারে হঠাৎ তিন লক্ষ বাড়তি রোহিঙ্গার বাড়তি চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কম আমদানি, ভারতের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি, বন্যায় বোরো মওসুমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি- এসবকে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে অভিহিত করেছেন সবাই।
গতকাল চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাকতাই চালপট্টির মেসার্স আরিফুর রহমান ট্রেডার্স, হাজী জামাল এন্ড ব্রাদার্স, আলম এন্ড ব্রাদার্স প্রভৃতি চালের আড়তে ঘুরে ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি বার্মা বেতির দাম মাত্র দুদিন আগে ১৬০০ টাকা হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৭০০ টাকায়। ফলে বার্মা বেতি কেজিতে বাড়ল ২ টাকা।
একইভাবে ইরি (মোটা আতপ ) এর আগের মূল্য ১৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকায়। বেতি-২৮ এর আগের মূল্য ২২০০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ২৩০০ টাকা, বেতি-২৯ এর আগের মূল্য ১৯৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ২০৫০ টাকা, মোটা সিদ্ধের আগের মূল্য ১৮৫০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ভেদে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা চিনিগুঁড়া চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। চিনিগুঁড়ার তিনদিন আগের দাম ৩৯০০ থেকে ৪০০০ এর মধ্যে থাকলেও গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া বস্তাপ্রতি মিনিকেট এর আগের মূল্য ২৪৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫৫০ টাকায়, জিরাশাইল ১০০ টাকা বেড়ে ২৭০০ টাকায় এবং পাইজাম ১০০ টাকা বেড়ে ২৫০০ টাকায় এবং ইন্ডিয়ান বেতি ১৬০০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দফায় দফায় চালের এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষ। সীমিত আয়ের একটি পরিবারে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনতে এখন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ হচ্ছে। চালের বিকল্প আটার দামও চলতি সপ্তাহে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ের হিসেব মেলাতে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।
আমদানি শুল্ক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা, বাকিতে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া ও সরকারিভাবে আমদানির প্রভাব চালের বাজারে পড়ছে না। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গত এক মাসে দেশের মানুষের প্রধান এই খাদ্যের দাম অন্তত তিন দফায় কেজি প্রতি ২ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে গত ২৪ আগস্ট থেকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা শুরুর পর দেশে বানের স্রোতের মত রোহিঙ্গাদের প্রবেশের পর থেকে চালের বাজারের উপর এর ব্যাপক চাপ পড়তে থাকে।
চাকতাই চালপট্টির আড়তদার এম. সরোয়ার চৌধুরী সুপ্রভাতকে বললেন, ‘দেশের চালের বাজার এমনিতেই টানাটানির মধ্যে থাকে। এর উপর হঠাৎ করে তিন লক্ষ রোহিঙ্গার ক্ষুধার্ত মুখ যোগ হওয়ায় চালের বাজারে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মানুষ ত্রাণের সাহায্য পাঠাতে পাইকারি বাজার থেকে যে হারে চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে সে হারে বাজারে চালের আমদানি নেই। ফলে পাইকারি বাজারে চালের দাম ঘণ্টয় ঘণ্টায় পরিবর্তন হচ্ছে।’
কথা হয় চাকতাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজমের সঙ্গে। চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি ৈসুপ্রভাতকে বললেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমাদের চালের বাজার বেশ ছোট। ভারতের চালের বাজারের উপর আমাদের অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। এখানকার আমদানিকারকরা সবাই ভারতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে ওখানকার চালের ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের এখানে চালের দাম বেড়ে চলেছে। এখন নতুন করে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও চালের দাম বাড়ছে। কারণ আমাদের মত রোহিঙ্গাদেরও প্রধান খাদ্য ভাত।’
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ আসে বোরো মৌসুমে। গত বোরোতে হাওরে ব্যাপকভাবে ফসলহানি ও বন্যায় উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছে। আগের বছর বোরোতে উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল। এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় গত এপ্রিল থেকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়তে থাকে।
চাকতাইয়ের একাধিক চালকলের সত্ত্বাধিকারী আলী আকবর সওদাগর সুপ্রভাতের সাথে এক আলাপচারিতায় বিলেন, বিভিন্ন মোকামে বর্তমানে ধানের দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে ধান কিনে রাইস মিল চালাতে হচ্ছে বলে চালের দামেও এর প্রভাব পড়ছে।